রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ না করলে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে ভারতের সম্মান ও আত্মমর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেস নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় রাজনীতিতে বিরলভাবে দেখা গেছে দলীয় বিভেদ ভুলে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান।
ভারতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা মনিষ তিওয়ারি বলেন, “ট্রাম্পের বক্তব্য ভারতের সম্মান ও আত্মমর্যাদায় আঘাত হেনেছে। এখন সময় এসেছে অব্যাহত হুমকি ও অপমানের যথাযথ জবাব দেওয়ার।”
ক্ষমতাসীন বিজেপির সহ-সভাপতি বাজিয়ানাত জয় পান্ডা মন্তব্য করেন, “আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক, কিন্তু মিত্র হওয়া আত্মঘাতী।” তিনি সাবেক মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের বিখ্যাত উদ্ধৃতি ব্যবহার করে ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক পোস্টে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। এর আগে জুলাই মাসেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল তার প্রশাসন।
রাশিয়া থেকে এককভাবে ভারতকে দায়ী করার বিরোধিতা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার সঙ্গে বিশাল পরিমাণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে ইইউ রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ৭৮০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য করেছে এবং এক কোটি ৬৫ লাখ মেট্রিক টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেছে।
এছাড়া রাশিয়া থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালেডিয়াম, সার ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এইসব পরিসংখ্যানের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো নির্দিষ্ট উৎস বা তথ্যসূত্র উল্লেখ করেনি।ভারতের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে ভারত রাশিয়া থেকে দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৭ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় এক শতাংশ বেশি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ সত্ত্বেও নয়াদিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার অবস্থান বজায় রেখেছে।