ডাক্তার থাকলেও কাজ করেন অন্য উপজেলায়
হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রায়শই বন্ধ থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা সহ পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলার মানুষ। প্রতিদিনই রোগীরা সেবা নিতে এসে নিরাশ হয়ে ফেরত যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রে হঠাৎ কারো দেখা মিললেও আধা ঘণ্টা কিংবা ঘণ্টাখানিক পর কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে চলে যান। এ যেন দায়সারা দায়িত্ব পালন। তবে সাত-আট মাস আগেও একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও চলতি বছরের শুরুতে অবসরে চলে যাওয়ায় শূন্য পদটি শূন্যই রয়ে যায়, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে কয়েক হাজার চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী।
শনিবার সরেজমিনে বেলা বারোটার দিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রে তালা ঝুলছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কারো দেখা মেলেনি। সোয়া বারোটার দিকে ওই এলাকার পঞ্চাশোর্ধ নাসিমা বেগম নামে এক নারী কেন্দ্রের সামনে এসে থমকে দাঁড়ান। তালা ঝুলতে দেখে বলে উঠেন, "আজও কেউ নেই।" জানতে চাইলে বলেন, "আগে ঠিক থাকলেও কয়েক মাস ধরে এখানে কাউকে পাচ্ছি না। হাসপাতাল যদি বন্ধ থাকে, তাহলে রোগীরা কোথায় যাবে? এখন বাড়তি টাকা গুণে গুমানমর্দন যেতে হবে।"
কেন্দ্র ঘেঁষা সেলুন দোকানের মালিক সুবল শীল বলেন, "এটা এখন প্রতিদিনের চিত্র। সকাল আটটায় দোকান খুলেছি। অনেক নারী রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে। কেন্দ্রে তালা দেখে রোগীদের কাছে আমাকেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে।"
স্থানীয় সোলেমান নামে এক ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেমে কেন্দ্রের সামনে এসে প্রতিবেদককে বলেন, "সরকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুলেছে জনগণের সেবার জন্য। অথচ যার যেভাবে ইচ্ছে আসছে আর যাচ্ছে। শুনেছি এখানে অনেক পদ শূন্য। পদ শূন্য থাকলে সেবাই বা দিবে কে? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।"
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সরোয়ার খাঁন বলেন, "এক সময় এ এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও যেতে হয়নি। চিকিৎসা সেবাও ভাল ছিল, সাথে ওষুধপত্র দেয়া হত। এখন তো ঠিকমত কেন্দ্রই খোলা হয় না। মাঝে মাঝে সকাল দশটার দিকে খোলা হলেও আধা ঘণ্টা কিংবা ঘণ্টাখানিক পর চলে যায়। কে শোনে কার কথা?"
ফটিকছড়ি উপজেলার নোয়াজিষপুর পশ্চিম নদিমপুর এলাকার আবুল কালাম বলেন, "এলাকা থেকে কাছে হওয়ায় আমরা এ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিতে আসি। আগে কখনও ফেরত কিংবা অন্য এলাকায় বলে ফিরে যাইনি। ভাল সেবাও পেয়েছি। বিগত কয়েক মাস ধরে এ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ বললেই চলে।"
শিমুল নামে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট এলাকার এক যুবক বলেন, "নিকটবর্তী তাই এ কেন্দ্র থেকে আমাদের মতো অনেকেই সেবা নেন। কয়েক মাস ধরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। বেসরকারি চিকিৎসক কিংবা ফার্মেসিতে প্রেসার মাপলেও ফি লাগে।"
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন এমবিবিএস ডাঃ নিয়োগ দিলেও শরীর অসুস্থতা দেখিয়ে যোগ না দিয়ে তদুপুরি অন্য উপজেলায় সংযুক্তি দেয়ায় পদটি শূন্যই রয়ে গেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, অফিস সহায়ক ও ফার্মাসিস্টের সবকটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। উপজেলার অন্যান্য কেন্দ্রেও অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় এ কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্বও এখন পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে পরিবার পরিকল্পনা ডিপার্টমেন্টের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার চলতি বছর অবসরে যাওয়ায় পদটি শূন্য। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে তিনজন ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে একজন কর্মরত থাকলেও তাদের কাজ মাঠ পর্যায়ে বলে জানান ওই ডিপার্টমেন্টের সহকারী শেখ আলম। এ ছাড়া ওই কেন্দ্রের আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরীর পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তাপস কান্তি মজুমদার দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, "একজন ডাঃ নিয়োগ দিলেও শারীরিক অসুস্থতা এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অন্য উপজেলায় সংযুক্তি দেয়ায় নাঙ্গলমোড়া কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। অপরদিকে ওই কেন্দ্রে স্বাস্থ্যের অন্যান্য পদগুলিও শূন্য। জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।"
www.ctgmirror.com is a popular Bengali news portal that focuses on delivering real-time updates across various sectors. Known for its fearless investigative journalism, it covers breaking news, entertainment, lifestyle, politics, economics, technology, health, and sports.
Copyright © 2025 CTG MIRROR. All rights reserved.