চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ আংশিক) আসনের আওতাধীন পৌরসভা, ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডভিত্তিক নেতৃবৃন্দ ও সংগঠকদের অংশগ্রহণে এবি পার্টির এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা আজ শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় হাটহাজারী বাসস্টেশন সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হায়দার আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-৫ আসনের প্রার্থী লে. কর্নেল মো. দিদারুল আলম, পিএসসি (অব.)।
কর্ণেল দিদার বলেন, ” আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে যোগাযোগ করে হাটহাজারী উপজেলা শহরে আন্ডারপাস নির্মাণ ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছি এবং তা আগামী একনেক মিটিং-এ উপস্থাপন ও অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট মহল আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে, এটি অনুমোদন পাবে। আশা করছি হাটহাজারীবাসি শিগগিরই একটি সুখবর পাবো।”
তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন, সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ কর্মজীবন এবং দেশ-বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “হাটহাজারীবাসী আমাকে চেনেন, আমিও এই এলাকার প্রতিটি রাস্তা, অলিগলি, নদী-নালা, কৃষিজমি, পাহাড় ও মানুষকে জানি ও ভালোবাসি।”
তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, এবি পার্টি এবং ঈগল প্রতীকের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কথা শোনা ও তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, “সকল মত-পথের মানুষকে হাটহাজারীর কল্যাণে একত্রিত করতে হবে।”
প্রধান বক্তা হিসেবে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. গোলাম ফারুক বলেন, “হাটহাজারী উপজেলার সন্তান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বে থাকাকালে এ উপজেলা যেন অবহেলিত না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “হাটহাজারীর সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছেন। তাই এই এলাকার প্রতি রাষ্ট্রের অধিক মনোযোগ দেওয়া উচিত।” তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমকে বিজয়ী করতে হাটহাজারীবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান বলেন, “চট্টগ্রাম-৫ আসনে পূর্ববর্তী সংসদ সদস্যরা যদি লুটপাটের অল্প অংশও হাটহাজারী শহরের যানজট নিরসনে ব্যয় করতেন, তাহলে আজ এই শহরের এই দুরবস্থা থাকতো না।”
চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া–চকবাজার–কোতোয়ালী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) জাতীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, “চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও, এ নগরী দীর্ঘদিন ধরে তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ যদি সরাসরি চট্টগ্রামের উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়, তবে নগরীর চেহারা আমূল বদলে যাবে।” তিনি জানান, এবি পার্টি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবের আওতায় হাটহাজারী, বোয়ালখালী, পটিয়া সহ মোট ১২টি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে ‘সিস্টার সিটি’ হিসেবে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে এসব এলাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ছিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, “চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যা, রাজস্ব ও সম্ভাবনার তুলনায় উন্নয়নের গতি অত্যন্ত অপ্রতুল। এবি পার্টি মানুষের অধিকার ও উন্নয়নের প্রশ্নে আপসহীন। তাই আমরা জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, পরিকল্পিত ও ন্যায়ভিত্তিক নগর পরিচালনার রূপরেখা উপস্থাপন করছি।” এসময় তিনি চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী–বায়েজিদ আংশিক) আসনে এবি পার্টির প্রার্থী হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলমের নাম উল্লেখ করেন এবং ঈগল প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মী ও সংগঠকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সমন্বয়ক ন ম জিয়াউল হক চৌধুরী সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. মাহবুবুল আলম, খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক ফারজানা আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন, হাটহাজারী উপজেলার সংগঠক প্রফেসর মো. আব্দুল আওয়াল, মো. জয়নুল আবেদীন, মো. রিদোয়ান, মো. মঞ্জুর এলাহী সজিব,এম এ আজিজ চৌধুরী, মজিবুর রহমান, শফিকুল আলম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. নুরুল আলম, মো. ওসমান খোকন, মো. ইউসুফ, মো. শরিফ খান, মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম ফারুক, মাহফুজা বেগম, স্বপ্না আক্তার, ফাতেমা বেগম প্রমুখ।
সভায় হাটহাজারী ও বায়েজিদ এলাকায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌর পর্যায়ে দলীয় সংগঠন পুনর্গঠন, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি, সদস্য সংগ্রহ, তরুণদের সম্পৃক্ততা এবং জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে এবি পার্টিকে জনগণের আস্থার রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলার নেতৃবৃন্দ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী ও সংগঠকরাও উপস্থিত ছিলেন।

