স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আধুনিক ব্যস্ত জীবনে এই সময়টুকু ঘুম অনেকের কাছেই বিলাসিতার মতো হয়ে উঠেছে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ক্ষতিকর পরিবর্তন দেখা দেয়—সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই ভয়াবহ তথ্য।
গবেষণাটি বলছে, যদি কেউ টানা তিন দিন ধরে রাতে মাত্র ৪ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তাহলে শরীরে এমন একটি প্রোটিন তৈরি হয় যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রোটিন সাধারণত তখনই রক্তে তৈরি হয়, যখন মানুষ মানসিক চাপ বা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগেন। প্রোটিনটি দীর্ঘদিন রক্তে থাকলে তা ধমনীর ক্ষতি করতে পারে। এর ফলস্বরূপ হৃদস্পন্দনের অনিয়ম, হার্ট অ্যাটাক কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ১৬ জন সুস্থ ও কমবয়সি পুরুষ। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন—খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা, সূর্যের আলো গ্রহণ ইত্যাদি—সবই স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। শুধুমাত্র ঘুমের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়। কখনও তাদের তিন দিন ধরে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমাতে দেওয়া হয়, আবার কখনও একই সময় ৪ ঘণ্টা বা তারও কম ঘুমানোর পর পরীক্ষায় ডাকা হয়। এরপর তাদের রক্ত পরীক্ষা করে পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ফলাফল বলছে, যারা নিয়মিত ঘুমিয়েছেন এবং শরীরচর্চা করেছেন, তাদের শরীরে এক ধরনের উপকারী প্রোটিনের মাত্রা বেড়েছে, যা হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের জন্য ভালো। কিন্তু যাদের ঘুমের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের শরীরে শরীরচর্চা করেও ওই উপকারী প্রোটিনের পরিমাণ বাড়েনি। বরং তাদের রক্তে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা ভবিষ্যতে জটিল হৃদরোগ বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা রাত জেগে কাজ করেন বা বিনোদনের কারণে ঘুম কমান, তাদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার।
সুস্থতার জন্য ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়, বরং তা শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। তাই ঘুমকে গুরুত্ব না দিলে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।