বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, “বাংলাদেশ কোনো এক নেতার দেশ নয়, এটি আঠারো কোটি জনগণের দেশ। আমাদের চিরদিনের জন্য এক নেতার একদেশ থেকে বাংলাদেশকে হেফাজত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের বিদায় করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “গত সাড়ে ষোল বছর ধরে আমাদের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের সব ধরনের অধিকার একজন ব্যক্তি কেড়ে নিয়েছিলেন। তিনি যদি রাতকে দিন বলতেন, সেটাই মেনে নিতে হতো। প্রশাসনের লোকজনকেও সেই সুরেই কথা বলতে হতো, যদিও তা ছিল ডাহা মিথ্যা।”
গত (৪ অক্টোবর) শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ফরহাদাবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত কর্মী সম্মেলন ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর অধ্যাপক খোরশেদুল আলম এনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলা উদ্দিন সিকদার, উত্তর জেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল হামিদ চৌধুরী, উপজেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম।ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি জহুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শোয়াইব চৌধুরী, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল মালেক চৌধুরী, উপজেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুছা আনছারী, ফটিকছড়ি উপজেলা নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ইসমাঈল গনি, ফটিকছড়ি উপজেলা সেক্রেটারি ইউসুফ বিন সিরাজ, জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট আলমগীর মুহাম্মদ ইউনুস, নাজিরহাট পৌরসভা সভাপতি বায়জিদ হাসান মুরাদ, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আরিফ, হাটহাজারী পৌরসভার আমীর মিজানুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা মাসুদুর রহমান ও মাওলানা আবদুল আজিজ। এছাড়া শিবিরের চট্টগ্রাম পূর্ব জেলা নেতা সাইরান কাদের এবং জামায়াত নেতা নিজাম মোর্শেদ চৌধুরী ও মাওলানা শহিদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা শাহজাহান তার বক্তব্যে আরো বলেন, “গত ষোল বছরে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটের আগের রাতে তা শেষ করে ফেলা হয়েছিল। বাকস্বাধীনতা হরণ করে মানুষকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। জনগণের মৌলিক অধিকার এবং গণতন্ত্রকে নিষ্পেষণ করা হয়েছিল। মানুষ তখন সংগ্রামী হতে বাধ্য হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য হেলিকপ্টার থেকে গ্রেনেড এবং গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এমনকি ছোট্ট শিশুকেও কোলে নিয়ে মা-বোনেরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন। সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে শহীদ করা হয়েছিল, যার সঠিক সংখ্যা জাতির কাছে আজও অজানা।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী দুঃশাসনের নিপীড়নে মাহফিলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে তাফসির মাহফিলও বন্ধ করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের উঁচু মানের আলেম মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, এবং দেশের অর্থনীতির ব্যক্তিত্ব মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে। আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকেও হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত করে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সাড়ে পনেরো বছর আমাদেরকে কথা বলতে না দিলেও আমরা জামায়াতের কাজ এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ করিনি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা হারানোর পর দেশ থেকে পালাতে হয়েছে, কারণ তারা দেশপ্রেমিক ছিল না, তারা ছিল অপরাধী।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, “মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্পর্শ করেনি। ব্যবহারিক, আধ্যাত্মিক, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সব দিকেই তিনি ছিলেন আদর্শিক এবং অনুকরণীয়। তার জীবন সর্বকালের মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক।”